হাঁপানি বা অ্যাজমা, খুসখুসে কাশি এবং বুকে কফ এর ঘরোয়া চিকিৎসা – Asthma Remedy

আমরা অনেকেই জানি যে, হাঁপানি বা অ্যাজমা একটি ফুসফুসজনিত রোগ। এর ফলে শ্বাসকষ্ট হয় যা অনেক সময় তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। ফুসফুসে বায়ু প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হলেই হাঁপানির আক্রমণ ঘটতে পারে যা অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্ট নামে পরিচিত। এটা বিভিন্ন কারনে হতে পারে, তবে সাধারণত এলার্জি, বায়ু দূষণ, শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ, আবেগ, আবহাওয়া, খাদ্য ও নির্দিষ্ট ওষুধের কারণেও হতে পারে। শহরে ধুলাবালির পরিমাণ বেশি, তাই হাঁপানি রোগীদের সংখ্যাও বেশী। কারণ হাঁপানি বা অ্যাজমা রোগীদের জন্য ধুলোবালি অত্যন্ত ক্ষতিকর। তবে এখন অ্যাজমা বা হাঁপানির অনেক চিকিৎসা রয়েছে যা আপনি চাইলে খুব সহজে এমনকি ওষুধ ছাড়াই প্রাকৃতিক উপায়ে পরিত্রাণ পেতে পারেন। তাহলে জেনে নিন হাঁপানি বা অ্যাজমা এবং খুচ-খুচি কাশি প্রতিরোধের প্রাকৃতিক উপায় সম্পর্কে।

বিনা পয়সায় কিভাবে হাঁপানি বা অ্যাজমা এবং খুচ-খুচি কাশি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়?

আমি আজ আপনাদের কাছে নিজের একটি ঘটনা বর্ণনা করছি। এখানে আপনি জানতে পারবেন কিভাবে আমি বিনা পয়সায় এজমা থেকে মুক্তি পেলাম। দীর্ঘ দিন ধরেই আমি মাঝে মাঝে এজমায় আক্রান্ত হই। আর এর প্রধান কারণ ধূলা-বালী এবং ঠান্ডা। ফলে বহুদিন যাবৎ আমি মাস্ক ব্যবহার করি এবং ঠান্ডা পানীয় থেকে বিরত থাকি।

আদা দিয়ে হাঁপানি বা অ্যাজমা এবং খুচ-খুচি কাশি থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়

উল্ল্যেখ্য যে, আমি ২/৩ বৎসর পূর্বে এজমার জন্য একজন ডাক্তার দেখিয়েছিলাম, এমনকি মহাখালী বক্ষব্যধি হাসপাতালেও গিয়েছি। উভয়র ক্ষেত্রেই তারা আমাকে একটি ইনহলার ব্যবহারের পরামর্শ দেয়। ইনহলারটি হল একটি লিকুইড গ্যাস স্প্রে, যার মধ্যে মেডিসিন দেওয়া থাকে এবং মূল্য নেয় (তখনকার) ৭৫০/- টাকা।  তাৎক্ষণিকভাবে কাজ করার জন্য ইহা একটি ভাল ঔষধ, আরামবোধ হবে এবং রাতে ঘোমাতে পারবেন। তবে রোগের উপসম হওয়ার জন্য একটি ফাইলই যথেষ্ট নয়, একটার পর একটা এইভাবে চালিয়ে যেতে হবে।

এবার মূল কথায় আসি। গতকাল ছিল বৃহস্পতিবার, রাতে এশার নামাজ পড়ে বাসায় আসার সময় রাস্তায় অনেক ধূলো-বালি ছিল। বেগের মধ্যে মাস্ক ছিল, কিন্তু অলসতার কারণে তা বের করা হয়নি, আর রক্ষা নেই। বাসায় আসার সাথে সাথেই হাচি শুরু হয়ে গেল, অতঃপর শ্বাসটান। রাত প্রায় সাড়ে এগারটা্য় খাওয়া-দাওয়া শেষে পানি খাই, তাও আবার পর্যাপ্ত গরম ছিল না। ফলে শ্বাসটান আরও বারতে থাকে। রাত প্রায় সাড়ে বারটায় আর শয্য করা সম্ভব হচ্ছে না। অনুন্যপায় হয়ে নিকটস্থ কোন হাসপাতালে যাওয়ার চেষ্টা করি।

উল্ল্যেখ্য যে, আমার বাসা ঢাকা, কল্যাণপুরে, এবং আশে-পাশে অনেকগুলো হাসপাতাল আছে। কিন্তু, দুর্ভাগ্য যে, গেইটে গিয়ে দেখলাম সিকিউরিটি গার্ড দরজা বন্ধ করে ঘোমাচ্ছে। অনেক ডাকাডাকি করেও তাকে জাগানো সম্ভব হয় নাই। ফলে আর হাসপাতালে যাওয়া হলো না। এবার বাসায় ফে২রত এসে ভাবছি কি করা যায়? অনেক খুজাখুজির পর একটি কালি জিরা তৈলের বোতল পেলাম। তৎক্ষনাত তা খুলে একটু তৈল মাথার তালুতে দিলাম, আর একটু তৈল হাতের আঙ্গুলে লাগিয়ে দুই নাকের ভিতরে প্রবেশ করালাম, এরপর ২/৩ ফোটা তৈল খেয়ে ফেললাম।

কিছুক্ষণপর মনে হলোযেন সামান্য উপকার হয়েছে। এখন রাত অনেক হয়েছে, আর তাই তাহায্যুতের নামাজ শেষ করলাম। যেদিন আমার শ্বাসটানের সমস্যা হয় সেদিন রাতে আমার ঘুম হয় না। তাই এবার লেপটপ খূলে ইউটিউবে এজমার প্রাকৃতিক চিকিৎসা সম্পর্কে সার্চ করতে থাকলাম। সরাসরি এজমার ব্যাপারে তেমন কিছু পাইনাই। তবে খুচ-খুছি কাশির জন্য আদা কিভাবে খেতে হয় তার একটি ভিডিও দেখলাম। এবার নিজের বুদ্ধিতে ও নিজ দ্বায়িত্বে আদা খেয়ে পরীক্ষা করার আইডিয়া মাথায় আসলো।

এখন কিচেনে খূজাখুজি করে কয়েক টুকরো আদা পেলাম। তার মধ্যথেকে একটুকরো নিয়ে ভাল করে  ধৌত করে একটি ছোট চামচদিয়ে উপরের খোসা ছাড়িয়ে নেই। অতঃপর আদার টুকরোটিকে ছুড়ি দিযে ৪/৫ খন্ড করি যাতে খেতে সুবিধা হয়। বিলম্ব না করে ১ খন্ড চিবিয়ে খেয়ে ফেললাম। তবে খেতে খুব কষ্ট হচ্ছিল। কারণ এত বেমজা জিনিস খাওয়ার অভ্যাস খুব কম লোকেরই থাকে। এটা কেবল ঔষধ হিসাবেই খাওয়া সম্ভব।

আদা দিয়ে হাঁপানি বা অ্যাজমা এবং খুচ-খুচি কাশি থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়
আদা দিয়ে হাঁপানি বা অ্যাজমা এবং খুচ-খুচি কাশি থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়

 

তবে যেপরিমাণ শ্বাসকষ্ট ভোগ করতে ছিলাম সেইতুলনায় বেমজা আদার টুকরাটি খাওয়াও তত কষ্টদাযক নয়। ফলে এক টুকরা খাওয়ার পর আরও এক টুকরা খেয়ে ফেললাম। এতক্ষণে ফজরের আজান হয়ে গেছে। ফলে তাড়াহুড়ো করে বাকী টুকরাগুলিও খেয়ে গরম পানি দিয়ে মূখের বাকী অংশগুলো গলাধকরন করলাম। অতঃপর ফজরের নামাজ পড়তে মসজিদে গেলাম এবং নামাজ শেষে বাসায় এসে মনে হলো ৭৫০/- টাকা দামের ইনহলার বা লিকুইড গ্যাস স্প্রে ব্যাবহারে যতটুকু আরাম পাওয়া যায় তার চেয়ে বেশী আরাম পাচ্ছি।

তাই এবার ভাবলাম এই মূল্যবান তথ্যটিকে ইউটিউবে শেয়ার করা জরুরী, কারণ এত বহুলোক উপকৃত হবে। অতএব, একটি ভিডিও বানাতে হবে যাতে সাধারণ মানূষ তা দেখে সরাসরি নিজে ব্যাবহার করতে পারে। ভিডিও বানাতে হলে প্রথমে ভিডিওর স্ক্রিপ্ট তৈয়ার করতে হয়। যখন ভিডিওটির স্ক্রিপ্ট তৈয়ার করতে বসলাম, তখন যোহর (শুক্রবার হওয়ায় জুম্মার) নামাজ শেষ হয়েছে। মনে হয়েছিল যেন আমার কখনো এজমাই ছিলনা। এমনকি শ্বাসটানের ফলে শরীরে যে জ্বরের ভাব ছিল সেটাও এখন আর নাই।

যেহেতু রাতে আমি কালিজিরার তৈল ব্যবহার করেছিলাম সেহেতু এতে তৈলের অবধানও থাকতে পাড়ে। তবে আমার মনে হয়েছে এজমার উপসমের জন্য শুধু আদাই যথেষ্ট। আপনি যদি এতে পুড়োপুড়ি উপকার না পান তাহলে আমার মতই সাথে কালিজিরার তৈল ব্যবহার করতে পারেন।

যেহেতু তাতে কোন টাকা-পয়সা খরচ হচ্ছে না, সেহেতে আপনিও একবার চেষ্টা করতে পারেন। আর প্রাকৃতিক উপাদানের তেমনকোন ক্ষতির সম্ভাবনা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে না। সর্বশেষে আমি বলব, যদি আপনি বা আপনার পরিবারের কেউ, অথবা আপনার পরিচিত কেউ খুচ-খুছি কাশি কিংবা এজমায় কষ্ট করতে দেখেন তাহলে তাকে নিম্নে বর্ণিত নিয়মে অর্থাৎ

প্রতিবার ২/৩ পিছ্ করে দিনে অন্ততঃ তিনবার এবং এইভাবে ২/৩ দিন আদা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বিনা পয়সার এই চিকিৎসাটি নেওয়ার সুযোগ করে দিন। কিভাবে আদা খেতে হবে তা নিম্নের ভিডিওতে দেখানো হল।

আদা কিভাবে কাজ করে?

আদায় রয়েছে অ্যান্টি – ব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট, যা শরীরের রোগ-জীবাণুকে ধ্বংস করে। ফলে জ্বর-জ্বর ভাব, গলাব্যথা ও মাথাব্যথা দূর করতে সাহায্য করে। আদা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, আদার রস দাঁতের মাড়িকে শক্ত করে, এবং দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা জীবাণুকে ধ্বংস করে।

প্রাকৃতিকভাবেই আদায় রয়েছে ব্যথানাশক উপাদান। তাই ব্যথা ও শরীরে যে কোন ধরনের প্রদাহ কমাতে কাজ করে আদা এবং ফুসফুসের সাধারণ যে কোন সংক্রমণ বা রোগের ক্ষেত্রে আদা বেশ কার্যকরী। এছাড়াও এতে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি এজেন্ট, ফলে দেহের কোথাও ক্ষতস্থান থাকলে তা দ্রুত শুকাতে সাহায্য করে আদা এবং যেকোনো কাটাছেঁড়া, ক্ষতস্থান দ্রুত ভালো করে।

আমাশয়, জন্ডিস, পেট ফাঁপা রোধে কাচা আদা চিবিয়ে বা রস করে খেলে উপকার পাওয়া যায়। তাই যারা গলার চর্চা করেন তাদের গলা পরিষ্কার রাখার জন্য ইহা খুবই উপকারী। ঠান্ডাজনিত টনসিলাইটিস, মাথাব্যথা, টাইফয়েড জ্বর, নাক দিয়ে পানি পড়া, নাক বন্ধ হওয়া, ইত্যাদিকে দূরে ঠেলে দেয় আদা।

আমাদের খাদ্য খাওয়ার পর পুষ্টি-উপাদানসমূহ যদি শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও কোষগুলোতে পরিপূর্ণভাবে না পৌঁছায়, সেক্ষেত্রে নানা রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আদা সেই পুষ্টি উপাদানগুলো শোষণ করার ক্ষেত্রে শরীরের কোষসমূহকে সহায়তা করে বিধায় নানা প্রকার রোগ-ব্যাধি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

Disclaimer

এই চিকিৎসাটি কোন গবেষণায় পরিক্ষীত নয়, বরং তা আমার ব্যক্তিগত জীবনের অভিগ্ঘতা। সুতরাং তা আপনার যুক্তির সাথে সংঘতিপূর্ন মনে হলেই কেবল গ্রহন করতে পারেন। আর যাদের প্রাকৃতিক চিকিৎসা পদ্ধতির প্রতি বিশ্বাস আছে তাদের জন্যই এই লেখাটি উৎসর্গ করিলাম। যারা প্রচুর টাকার মালিক কিংবা চিকিৎসার জন্য প্রচুর টাকা খরচ করতে আগ্রহী তাদের জন্য এই পদ্ধতি নয়। সবশেষে বলতে চাই, কোন প্রকার অসংঘতি (সম্ভাবনা খুবই কম) মনে হইলে চিকিৎসকের সাহায্য নিন।

আর মনে রাখবেন, শরীরের গঠন ও অন্যান্য নানাবিধ কারণে একই ঔষধ সবার জন্য সমানভাবে কাজ নাও করতে পারে। ফলে কারো বেলায় তাড়াতাড়ি এবং কারো বেলায় বিলম্বে কাজ করবে, আবার কারো বেলায় কাজ নাও করতে পারে। তবে সবারই একবার চেষ্টা করে দেখা উচিৎ।

 

(Visited 92 times, 1 visits today)
error: Content is protected !!